• রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪২৯

সারা দেশ

কালীগঞ্জে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ক্যাপসিকাম ফলের চাষ

  • ''
  • প্রকাশিত ২১ মার্চ ২০২৪

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি:

ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হয়েছে ক্যাপসিকামের। এ চাষে ব্যবহার করা হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তিতে, যে কারণে ফলনও ভালো হবে এমন টা আশা করছেন ক্ষেত মালিক। ক্ষেত মালিক ও কৃষি উদ্যোক্তা বলছেন, ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত ও চাষটি ছড়িয়ে দিতে পারলেই কমবে আমদানি নির্ভরতা। কৃষি বিভাগ বলছে, সবজিটির চাষ ছড়িয়ে দিতে কাজ করা হচ্ছে কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। ক্যাপসিকাম ফলটি অনেকেই বলে থাকেন মিষ্টি মরিচ একটি জনপ্রিয় সবজি।

বিশ্বজুড়ে রয়েছে এ ফলের রয়েছে জনপ্রিয়তা। দেশীয় সবজি না হলেও এখন এ সবজির চাষ করেছেন কালীগঞ্জ উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের কৃষক শাহিন হোসেন। নতুন কিছু করার প্রত্যায় নিয়ে এক প্লটে ১০ শতক জমি নিয়ে পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ শুরু করেন ক্যাপসিকামের। অনেক পরিশ্রমের পর এখন গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে সবুজ ক্যাপসিকামের। নিবিড় পরিচর্যা ও সময়মত ওষুধ প্রয়োগ করতে পারলে এ সবজির চাষ এলাকায় বিস্তার করা সম্ভব বলে মনে করেন ক্ষেত মালিক শাহিন হোসেন। প্রয়োজনের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে উৎপাদিত ক্যাপসিক্যাম বাজার নিশ্চিত করতে পারবে এমন টা আশা করছেন তিনি। সফল চাষ দেখে অনেকেই এগিয়ে আসছেন ক্যাপসিকাম চাষ করবেন।

ক্যাপসিকাম চাষি শাহিন হোসেন জানান, ক্যাপসিকামের বীজ বপন করার এক মাস পর চারা তৈরি হয়। চারা উপযুক্ত হওয়ার পর জমি তৈরি করতে হয়। চারা রোপণের আগে পলিথিন দিয়ে বেড তৈরি করে নির্দিষ্ট পরিমাণ জায়গা ফাঁকা রেখে গাছের চারা বপন করতে হয়। বীজ বপনের পর গাছগুলো নিয়মিত পরিচর্যা করতে হয়। গাছ লাগানোর ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে ফুল আসতে শুরু করবে। ফুল আসার ২৫ দিনের মধ্যে ফল বিক্রির উপযুক্ত হবে। কয়েক মাস পর্যন্ত ফল পাওয়া পাবেন এ গাছ থেকে। এ বছর তিনি অল্প পরিসরে এ মরিচের চাষ করেছেন। আগামীতে কয়েকগুণ বাড়িয়ে এ মরিচের চাষ করবেন বলে জানান তিনি।গাছগুলো ভালো হওয়ায় ফলনও ভালো হবে। এটি সবজি হিসেবে যে কোনো খাবারের সঙ্গে খাওয়া যায়। ক্যাপসিক্যামে মরিচের মত গন্ধ থাকলেও খাওয়ার সময় ঝাল লাগে না। প্রচুর পুষ্টিগুণ আছে বিদেশি এ সবজিটিতে।

কালীগঞ্জ উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের কৃষক শাহীন হোসেনর বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে প্রশিক্ষন ও তাদের সহযোগিতা নিয়ে নিজের ১০ শতক জমিতে পরীক্ষামূলক ভাবে ক্যাপসিকাম চাষ শুরু করেছেন। প্রায় ৪ মাস আগে জমি তৈরি করে রোপণ করেন উচ্চ ফলনশীল ক্যাপসিকাম। তার এ ক্ষেত থেকে ফল আসতে শুরু করেছ। প্রতিটি গাছ থেকে ৪ থেকে ৫ কেজি পর্যন্ত ক্যাপসিকাম ফল পাবেন এমন টা আশা করছেন। পিরোজপুর গ্রামের রবিউল ইমলাম বলেন, আমাদের এলাকায় এই প্রথম দেখলাম ক্যাপসিকামের চাষ করেছেন শাহিন হোসেন। শাহীনের ক্যাপসিকাম চাষ দেখে আমি ও উদ্যোগ নিয়েছি এ ফল চাষ করকে।

১০ শতক জমিতে ক্যাপসিকাম চাষে বীজ কেনা, জমি প্রস্তুত, সার, বালাইনাশক ও মালর্চিং পেপার কেনা এবং শেড তৈরিসহ সব মিলিয়ে মোটা অংকের টাকা খরচ হয়েছে। যদিও নিজেরা কাজ করায় এর মধ্যে শ্রমিকের খরচ খুব বেশি লাগেনি। চারা রোপণের আড়াই মাস পর থেকে তিনি ক্যাপসিকাম বিক্রি শুরু করবেন বলে আশা করছেন। তবে ক্যাপসিকাম স্থানীয় ভাবে বিক্রি করা যায় না।

বিক্রি করতে হবে ঢাকার কাওরান বাজারে। তবে ক্যাপসিকাম সবজিটি এ অঞ্চলের মানুষ খেয়ে অব্যস্ত না থাকায় স্থানীয়ভাবে ক্যাপসিকাম বিক্রি করতে সমস্যায় পড়তে হতে পাবে।ক্যাপসিকাম একটি বৈশ্বিক সবজি। এটাকে মিষ্টি মরিচ নামেও ডাকা হয়। মিষ্টি মরিচের আকার ও আকৃতি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে তবে সাধারণ ফল গোলাকার ও ত্বক পুরু হয়। মিষ্টি মরিচ দেশীয় প্রচিলিত সবজি না হলেও ইদানীং এর চাষ বাড়ছে বিভিন্ন ঐলাকায়। এছাড়া মিষ্টি মরিচের বিদেশে রপ্তানির সম্ভাবনাও প্রচুর কারণ সারা বিশ্বে টমেটোর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সবজি হচ্ছে মিষ্টি মরিচ।

পুষ্টি মনের দিক থেকে মিষ্টি মরিচ অত্যন্ত একটি মূল্যবান সবজি বলে পুষ্টিবিদদের অভিমত। তাঁদের মতে, প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন 'সি' থাকার কারণে এবং অতি সহজেই টবে চাষ করা যায় বলে দেশের জনসাধারণকে মিষ্টি মরিচ চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে।এ ফল বাজারে বিক্রি করে পরিবারের অভাব-অনটন ঘোঁচবে বলে আশাবাদী। তবে, স্থানীয় বাসিন্দারা ক্যাপসিকাম সবজিটি খাওয়ায় অভ্যস্ত না থাকায় ক্যাপসিকাম স্থানীয় কোনো হাট-বাজারে বিক্রি হয় না। অনেকটা বাধ্য হয়েই বিক্রি করতে হবে ঢাকার কাওয়ান বাজারে নিয়ে গিয়ে। এতে সময় ও অর্থ দুটোই অপচয় হচ্ছে।

কালীগঞ্জের পিরোজপুর গ্রামের শাহিনের ক্ষেত প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন ক্যাপসিকামের খেত দেখতে আসছেন। ক্যাপসিকাম উচ্চ মূল্যের একটি নতুন ফসল। এ উপজেলায় প্রথমবার বাণিজ্যিক ভাবে এ ফসল চাষ করে সাফল্য করবেন কৃষি উদ্যোক্তা শাহিন হোসেন।কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে।

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার মাহবুব আলম রনি বলেন, ক্যাপসিকাম মানুষের কাছে একটি জনপ্রিয় সবজি ও লাভজনক ফসল। বাজারে এর ভালো দাম পাওয়া যায়। ইতোমধ্যে শাহীন হোসেন নামের এক কৃষক পরীক্ষামূলক ভাবে ক্যাপসিকামের চাষ শুরু করেছেন। আমরা আশা করছি আগামীতে এলাকয় আরও বড় পরিসরেক্যাপসিকামের চাষ হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads